নিজস্ব প্রতিনিধি,
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলায় যুবলীগ নেতার স্ত্রীকে নিয়ে পালানোর ঘটনায় আহসানুল ইসলাম অর্কিড (৩০) নামে এক যুবককে পেট্রল ঢেলে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। দগ্ধ হওয়ার পাঁচ দিন পর সোমবার (১১ মার্চ) সকাল ১১টার দিকে ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
ঘটনার পেছনের কাহিনি
নিহত আহসানুল ইসলাম অর্কিড কালীগঞ্জ উপজেলার কাঁঠালবাগান এলাকার ওসমান গণির ছেলে। পরিবারের অভিযোগ, উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক কাউন্সিলর মনিরুজ্জামান রিংকু, তার স্ত্রী তারিন খাতুন ও তাদের সহযোগী ফয়সাল পরিকল্পিতভাবে অর্কিডকে হত্যা করেছেন।
প্রায় এক মাস আগে যুবলীগ নেতা রিংকুর স্ত্রী তারিন খাতুনকে নিয়ে পালিয়ে যান অর্কিড। পরবর্তীতে তারা বিয়ে করেন এবং আত্মগোপনে থাকেন। অর্কিড নিজেও বিবাহিত ছিলেন এবং দুই সন্তানের জনক ছিলেন বলে জানা গেছে।
পুড়িয়ে হত্যার বর্ণনা
পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ মার্চ বুধবার সকালে যশোর পুরাতন কসবা রায়পাড়া বটতলা মসজিদের কাছে অর্কিডকে ডেকে আনা হয়। তারিন খাতুন তাকে ফোন করে ‘মীমাংসার’ কথা বলেন। কিন্তু সেখানে পৌঁছানোর পর রিংকু, তারিন ও ফয়সাল মিলে তার শরীরে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন।
পুড়িয়ে ফেলার পর তারা দ্রুত পালিয়ে যান, আর অর্কিড মাটিতে পড়ে ছটফট করতে থাকেন। স্থানীয়রা বিষয়টি দেখতে পেয়ে তাকে উদ্ধার করে পরিবারের কাছে খবর দেন।
ভয় ও নিরাপত্তার কারণে অর্কিডের পরিবার প্রথমে যশোরের কোনো হাসপাতালে নিতে সাহস করেনি। পরে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে ৫ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে সোমবার সকাল ১১টার দিকে তিনি মারা যান।
নিহতের পরিবারের প্রতিক্রিয়া
অর্কিডের বাবা ওসমান গনি বলেন,
"আমার একমাত্র ছেলেকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। সাবেক এমপি আনোয়ারুল আজীম আনারের ভাইপো রিংকু, তার স্ত্রী তারিন ও তাদের সহযোগী ফয়সাল আমার ছেলেকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই।"
অর্কিডের মা জোসনা বেগম অভিযোগ করে বলেন,
"আগুন দিয়ে পোড়ানোর পর আমার ছেলেকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে বাধা দেওয়া হয়েছিল। রিংকু ও তারিন আমাদের জোরপূর্বক ভিডিও করতে বাধ্য করে। না করলে তারা আমাদের সন্তানকে নিয়ে আসতে দিত না।"
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিক্রিয়া
যশোর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী বাবুল আক্তার বলেন,
"৫ মার্চ সকালে যশোরের পুরাতন কসবা এলাকায় এক যুবককে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টা চালানো হয়। পাঁচ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর তিনি মারা গেছেন। এখনও নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো মামলা দায়ের করা হয়নি। তারা মামলা করতে এলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।